মুখে ১ ঘণ্টা লোডশেডিং, আদতে হচ্ছে ৯ ঘণ্টা, অভিযোগ বাংলাদেশে

সরকার সারাদেশে প্রতি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বললেও বাস্তবে কোথাও কোথাও দিনে ৯ ঘণ্টাও হচ্ছে৷ লোডশেডিংয়ের নতুন যে শিডিউল দেয়া হয়েছে তাতে কোথাও দিনে তিন ঘণ্টার কম লোডশেডিং নেই৷

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডয়চে ভেলের কাছে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ তারা বলছে, পুরো দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং নয়৷ যখন লোডশেডিং করা হবে, তখন টানা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা করা হবে৷ এটা দিনে একাধিকবারও হতে পারে৷

১৯ জুলাই থেকে বিদ্যুতের এই রেশনিং শুরু হয়৷ তখন বলা হয়েছিল, প্রথম সাত দিন ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে৷ পরে পরিস্থিতি বুঝে দুই ঘণ্টা করা হতে পারে৷ ২৫ জুলাই এক সপ্তাহ শেষে দুই ঘণ্টা বা তার বেশি লোডশেডিংয়ের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি৷ 

আরও পড়ুন: Bangladesh Energy crisis- লোডশেডিং কি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?

কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো ২৬ জুলাইয়ের যে লোডশেডিং শিডিউল প্রকাশ করেছে, তাতে সর্বনিম্ন তিন ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ নয় ঘণ্টার লোডশেডিং করা হচ্ছে৷ সিলেট অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ৷ সিলেটের কোথাও চার ঘণ্টার কম লোডশেডিং নেই৷ সর্বোচ্চ নয় ঘণ্টা সেখানেই৷

ঢাকায় ডেসকো যে শিডিউল দিয়েছে, তাতে সর্বনিম্ন লোডশেডিং তিন ঘণ্টা আর সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা৷ তবে ঢাকার আরও একটি বিতরণ কর্তৃপক্ষ ডিপিডিসি অবশ্য এক ঘণ্টা করেই লোডশেডিংয়ের শিডিউল দিয়েছে৷ তবে তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রেখেছে, ‘এই মুহূর্তে কোনো লোডশেডিং নেই৷’

‘ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানি’ লোডশেডিংয়ের নতুন শিডিউল প্রকাশ করছে না৷ তবে পুরোনো শিডিউলে যশোর ও খুলনা এলাকায় দু’ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে৷ রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে নেসকো এক ঘণ্টা করেই লোড শেডিংয়ের কথা বলছে৷

পিডিবি সরাসরি যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিং ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে৷ ওইসব এলাকায় সর্বনিম্ন দুই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তালিকা দেয়া হয়েছে৷ সিলেট ওসমানি বিমানবন্দরেই ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে৷ তবে এর আগে তারা ২৫ থেকে ২৭ জুলাইয়ের যে শিডিউল প্রকাশ করে, তাতে সিলেটের মিয়াপাড়া, মেন্দিবাগ-সহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়৷ সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা৷

বাংলাদেশে বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডের৷ তারা উপজেলা পর্যায়ে এবং গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে৷ তারা সর্বনিম্ন তিন ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তালিকা দিয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে সেটা মানা হচ্ছে না৷

সিলেটের বাসিন্দা মনোয়ার জাহান জানান, বিদ্যুতের যে শিডিউল দেওয়া হচ্ছে, তা-ও মানা হচ্ছে না৷ এখন এক ঘণ্টা পর এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ থাকে না৷ বলতে গেলে দিনে ৯-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না৷ আর গ্রামাঞ্চলে পল্লি বিদ্যুতের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল৷ এখন আরও খারাপ৷ কোথাও কোথাও ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না৷

সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির বলেন, ‘আজকে (মঙ্গলবার) সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৫৫০ মেগাওয়াট৷ পাওয়া গেছে চাহিদার অর্ধেকের একটু বেশি ২৭০ মেগাওয়াট৷ আজকে আবহাওয়া একটু ভালো থাকায় আমরা শিডিউল অনেকটা মানতে পারছি৷ তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে শিডিউল কখনও-কখনও মানা যায় না৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়৷তার বেশি লোডশেডিং হয় না৷’

রংপুরের বাসিন্দা লিয়াকত আলি বাদল বলেন, ‘এখানে শিডিউল মানা হচ্ছে না৷ এক ঘণ্টা পরপরই বিদ্যুৎ যায়৷ রাত ১১ টা থেকে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে৷ দিনের বেলা আসলে বিদ্যুতের ঠিক থাকে না৷ গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ৷’ রংপুর বিভাগের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দিনে বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৭০০ মেগাওয়াট৷ পাচ্ছি ৫৫০ মেগাওয়াট৷ ফলে শিডিউল মানা কঠিন৷’ 

তিনি বলেন, ‘দিনে এত ঘণ্টা করে লোডশেডিং করলে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে৷ কিন্তু আমার তো ঘাটতি ১৫০ মেগাওয়াট৷ তাই বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে৷’ তিনি অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুরো দিনে এক ঘণ্টা নয়, এক ঘণ্টায় লোডশেডিং করতে হবে৷ তাই দিনে যতবারই করি এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করি৷’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে মঙ্গলবার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট৷ কিন্তু সম্ভাব্য উৎপাদন হচ্ছে ১১,৮১০ মেগাওয়াট৷ ঘাটতি আছে ২,০৪০ মেগাওয়াটের৷ বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের শুরুতে বলা হয়েছিল প্রতিদিন ১৩,০০০ মেগাওয়াট বিদুৎ পাওয়া যাবে৷ তিনি এখন তার চেয়েও আরো এক হাজার ১৯০ মেগাওয়াট কম পাওয়া যাচ্ছে৷ বোর্ডের পরিচালক শামিম হাসান জানান, ‘আমরা কাঁচামালের অভাবে বিদ্যুৎ চাহিদামতো উৎপাদন করতে পারছি না, যা পারছি সেভাবে লোডশেডিং করে বিতরণ করছি৷’ তাঁর কথায়, ‘উৎপাদন আর কমার সম্ভাবনা কম৷ বাড়তে পারে৷ আমরা আগামিকাল (বুধবার) পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে৷

দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরো ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা নয়, কোনও এলাকায় যখন লোডশেডিং করা হবে, তখন একঘণ্টা করা হয়৷ তাই কোনও এলাকায় টানা নয়, পর্যায়ক্রমে দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিংও হতে পারে৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)