কলকাতা-ঢাকার দূরত্ব কমছে ২০০ কিমি, পদ্মার পর চালু হচ্ছে কালনা সেতু

চালু হতে চলেছে কালনা ব্রিজ। পদ্মা সেতুর পর এবার পালা মধুমতী নদীর উপর নির্মিত কালনা ব্রিজের। এই নদীটি বাংলাদেশের নড়াইল এবং ফরিদপুর জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে। একবার এই সেতু চালু হয়ে গেলে কলকাতা এবং ঢাকার দূরত্ব আরও কমে যাবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার কমবে এই দুই জায়গার দূরত্ব। ফলে কালনা ব্রিজ দুই বাংলাকে আরও কাছাকাছি এনে দিতে চলেছে যে সেটা বলাই যায়।

এই সেতুটি তৈরি হয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির অর্থ সাহায্যের দ্বারা। এবং প্রজেক্টটি ছিল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক প্রজেক্টের আওতায়। কালনা সেতু যতক্ষণ না চালু হচ্ছে, ততদিন বাংলাদেশের একাধিক জেলা, যেমন নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর-সহ একাধিক জায়গা পদ্মা সেতুর যে সুফল সেটা উপভোগ করতে পারছেন না। 

এমনকী যাঁরা কলকাতা থেকে ঢাকা যান তাঁরাও এই সেতুর কোনও উপকার পাচ্ছিলেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে মধুমতী নদীর তীরে এসে সমস্ত যানবাহনকে কালনাঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকে এই সমস্যা এড়ানোর জন্য আবার ঘুরপথে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে অনেক বাস এবং গাড়ি কলকাতা আসার জন্য ফরিদপুর, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা ঘুরে যাচ্ছে। এবার কালনা সেতু চালু হলে অনেকটাই সমস্যার সমাধান হবে।

এই সেতুটি বাংলাদেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। মধুমতী নদীর একদিকে নড়াইলের কালনাঘাট, অপরদিকে আছে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। জানা গিয়েছে, শেখ হাসিনা সবুজ সংকেত দিলেই আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই চালু করে দেওয়া হবে এই সেতুটি। তখন জনসাধারণ এই সেতু ব্যবহার করতে পারবেন পারাপারের জন্য। এমনটাই জানিয়েছেন এই সেতুর কর্তৃপক্ষ। নেলসন লোস আর্চ টাইপের এই সেতুটি। ৬৯০ মিটার এই সেতুর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হল ২৭.১ মিটার। ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এই সেতু নির্মাণে।

এই সেতু একবার চালু হয়ে গেলে তা সোজাসুজি যুক্ত করবে সিলেটের তামাবিল, ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল হয়ে সোজা কলকাতাকে। এই সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের উপর তৈরি করা হয়েছে। একবার এই সেতু চালু হয়ে যাওয়া মানে সেটা শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে নিজের।

২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ওপার বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট এবং ঢাকার দূরত্ব হচ্ছে ১০৮ কিলোমিটার। এই সেতু চালু হলে ঢাকা এবং নড়াইল সহ বেনাপোল, যশোর, ইত্যাদির মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার কমে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের মানুষ বিশেষ সুবিধা পাবেন না। কারণ সেখানে কোনও হাইওয়ে তৈরি করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে নড়াইল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে দুই লেনের সড়ক চালু আছে, সেখানে হাইওয়ে বানানোর পরিকল্পনা আছে বলেই জানা গিয়েছে।

তবে কালনা সেতু চালু হয়ে গেল সেটা নড়াইলের লোহাগড়া ইপিজেড চালু এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে ভীষণই সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের অসম এবং কলকাতার সঙ্গে দারুন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে বাংলাদেশের একাধিক অংশের জন্য। এখন সবটাই শেখ হাসিনার নির্দেশের উপর নির্ভর করছে যে কবে এই সেতু চালু হবে।